Bodhon kobita lyrics Sukanta Bhattacharya বোধন কবিতা – সুকান্ত ভট্টাচার্য

+ প্রিয়জনের কাছে শেয়ার করুন +

Bodhon kobita lyrics Sukanta Bhattacharya বোধন কবিতা - সুকান্ত ভট্টাচার্য

 

Bengali Poem (Bangla Kobita), Bodhon written by Sukanta Bhattacharya বাংলা কবিতা, বোধন লিখেছেন সুকান্ত ভট্টাচার্য

 

হে মহামনব, একবার এসাে ফিরে

শুধু একবার চোখ মেলো এই গ্রাম নগরের ভিড়ে,

এখানে মৃত্যু হানা দেয় বারবার;

লােকচক্ষুর আড়ালে এখানে জমেছে অন্ধকার।

এই যে আকাশ, দিগন্ত, মাঠ স্বপ্নে সবুজ মাটি

নীরবে মৃত্যু গেড়েছে এখানে ঘাঁটি;

কোথাও নেইকো পার

মারী ও মড়ক, মন্বন্তর, ঘন ঘন বন্যার

আঘাতে আঘাতে ছিন্নভিন্ন ভাঙা নৌকার পাল,

এখানে চরম দুঃখ কেটেছে সর্বনাশের খাল,

ভাঙা ঘর, ফাঁকা ভিটেতে জমেছে নির্জনতার কালাে,

হে মহামানব, এখানে শুকনাে পাতায় আগুন জ্বালাে।

 

ব্যাহত জীবনযাত্রা, চুপি চুপি কান্না বও বুকে,

হে নীড়-বিহারী সঙ্গী! আজ শুধু মনে মনে ধুকে

ভেবেছ সংসারসিন্ধু কোনাে মতে হয়ে যাবে পার

পায়ে পায়ে বাধা ঠেলে। তবু আজো বিস্ময় আমার-

ধূর্ত, প্রবঞ্চক যারা কেড়েছে মুখের শেষ গ্রাস

তাদের করেছে ক্ষমা, ডেকেছ নিজের সর্বনাশ।

তােমার ক্ষেতের শস্য

চুরি ক’রে যারা গুপ্তকক্ষতে জমায়

তাদেরি দু’পায়ে প্রাণ ঢেলে দিলে দুঃসহ ক্ষমায়;

লােভের পাপের দুর্গ গম্বুজ ও প্রাসাদে মিনারে

তুমি যে পেতেছ হাত; আজ মাথা ঠুকে বারে বারে

অভিশাপ দাও যদি, বারংবার হবে তা নিস্ফল-

তােমার অন্যায়ে জেনাে এ অন্যায় হয়েছে প্রবল।

তুমি তাে প্রহর গােনো,

তারা মুদ্রা গােনে কোটি কোটি,

তাদের ভাণ্ডার পূর্ণ; শূন্য মাঠে কঙ্কাল-করােটি

তােমাকে বিদ্রুপ করে, হাতছানি দিয়ে কাছে ডাকে-

কুজ্ঝটি তােমার চোখে, তুমি ঘুরে ফেরাে দুর্বিপাকে।

 

পৃথিবী উদাস, শােনাে হে দুনিয়াদার

সামনে দাঁড়িয়ে মৃত্যু-কালাে পাহাড়

দগ্ধ হৃদয়ে যদিও ফেরাও ঘাড়

সামনে পেছনে কোথাও পাবে না পার;

কি করে খুলবে মৃত্যু- ঠেকানাে দ্বার-

এই মুহূর্তে জবাব দেবে কি তার?

 

লক্ষ লক্ষ প্রাণের দাম

অনেক দিয়েছি; উজাড় গ্রাম।

সুদ ও আসলে আজকে তাই

যুদ্ধ শেষের প্রাপ্য চাই।

 

কৃপণ পৃথিবী, লােভের অস্ত্র

দিয়ে কেড়ে নেয় অন্নবস্ত্র,

লােলুপ রসনা মেলা পৃথিবীতে

বাড়াও ও-হাত তাকে ছিঁড়ে নিতে।

লোভের মাথায় পদাঘাত হানো-

আনো, রক্তের ভাগীরথী আনো।

দৈত্যরাজের যত অনুচর

মৃত্যুর ফাঁদ পাতে পর পর

মেলাে চোখ আজ ভাঙো সে ফাঁদ-

হাঁকো দিকে দিকে সিংহনাদ।

তােমার ফসল, তােমার মাটি

তাদের জীয়ন ও মরণ কাঠি

তােমার চেতনা চালিত হাতে।

এখনও কাঁপবে আশঙ্কাতে?

স্বদেশপ্রেমের ব্যাঙ্গমা পাখি

মারণমন্ত্র বলে শােনো তা কি?

এখনাে কি তুমি আমি স্বতন্ত্র?

করো আবৃত্তি, হাঁকো সে মন্ত্রঃ

শােন্ রে মালিক, শােন্ রে মজুতদার!

তােদের প্রাসাদে জমা হ’লো কত মৃত মানুষের হাড়-

হিসাব কি দিবি তার?

 

প্রিয়াকে আমার কেড়েছিস তােরা,

ভেঙেছিস ঘর বাড়ী,

সে কথা কি আমি জীবনে মরণে

কখনাে ভুলতে পারি?

আদিম হিংস্র মানবিকতার যদি আমি কেউ হই

স্বজন হারানাে শ্মশানে তােদের

চিতা আমি তুলবােই।

শােন্ রে মজুতদার,

ফসল ফলানাে মাটিতে রােপন

করব তােকে এবার।

তারপর বহুশত যুগ পরে

ভবিষ্যতের কোনাে যাদুঘরে

নৃতত্ত্ববিদ হয়রান হ’য়ে মুছবে কপাল তার,

মজুতদার ও মানুষের হাড়ে মিল খুঁজে পাওয়া ভার।

তেরশাে সালের মধ্যবর্তী মালিক, মজুতদার

মানুষ ছিলাে কি? জবাব মেলে না তার।

 

আজ আর বিমূঢ় আস্ফালন নয়,

দিগন্তে প্রত্যাসন্ন সর্বনাশের ঝড়;

আজকের নৈঃশব্দ্য হােক যুদ্ধারম্ভের স্বীকৃতি।

দু’হাতে বাজাও প্রতিশােধের উন্মত্ত দামামা,

প্রার্থনা করােঃ

হে জীবন, হে যুগ-সন্ধিকালের চেতনা-

অজিকে শক্তি দাও, যুগ যুগ বাঞ্ছিত দুর্দমনীয় শক্তি,

প্রাণে আর মনে দাও শীতের শেষের

তুষার-গলানাে উত্তাপ।

টুকরাে টুকরাে ক’রে ছেঁড়ো তােমার

অন্যায় আর ভীরুতার কলঙ্কিত কাহিনী।

শােষক আর শাসকের নিষ্ঠুর একতার বিরুদ্ধে

একত্রিত হােক আমাদের সংহতি।

 

তা যদি না হয়, মাথার উপরে ভয়ংকর

বিপদ নামুক, ঝড়ে বন্যায় ভাঙুক ঘর;

তা যদি না হয়, বুঝবে তুমি তাে মানুষ নও-

গােপনে গােপনে দেশদ্রোহীর পতাকা বও।

ভারতবর্ষ মাটি দেয়নিকো, দেয় নি জল

দেয়নি তােমার মুখেতে অন্ন, বাহুতে বল

পূর্ব পুরুষ অনুপস্থিত রক্তে, তাই

ভারতবর্ষে আজকে তােমার নেইকো ঠাঁই॥

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কবিকল্পলতা অনলাইন প্রকাশনীতে কবিতা ও আবৃত্তি প্রকাশের জন্য আজ‌ই যুক্ত হন। (কবিকল্পলতায় প্রকাশিত আবৃত্তি ইউটিউব ভিউজ ও সাবস্ক্রাইবার বাড়াতে সহায়তা করে)