Banshiwala kobita poem lyrics বাঁশিওয়ালা কবিতা – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

+ প্রিয়জনের কাছে শেয়ার করুন +

Banshiwala kobita poem lyrics বাঁশিওয়ালা কবিতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

 

Bangla Kobita, Banshiwala written by Rabindranath Tagore বাংলা কবিতা, বাঁশিওয়ালা লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

 

‘ওগো বাঁশিওয়ালা,

বাজাও তোমার বাঁশি,

শুনি আমার নূতন নাম’-

এই বলে তোমাকে প্রথম চিঠি লিখেছি,

মনে আছে তো?

আমি তোমার বাংলাদেশের মেয়ে।

সৃষ্টিকর্তা পুরো সময় দেন নি

আমাকে মানুষ ক‘রে গড়তে,

রেখেছেন আধাআধি করে।

অন্তরে বাহিরে মিল হয় নি-

সেকালে আর আজকের কালে,

মিল হয় নি ব্যথায় আর বুদ্ধিতে,

মিল হয় নি শক্তিতে আর ইচ্ছায়।

আমাকে তুলে দেন নি এ যুগের পারানি নৌকোয়-

চলা আটক করে ফেলে রেখেছেন,

কালস্রোতের ও পারে বালুডাঙায়।

 

সেখান থেকে দেখি

প্রখর আলোয় ঝাপসা দূরের জগৎ;

বিনা কারণে কাঙাল মন অধীর হয়ে ওঠে;

দুই হাত বাড়িয়ে দিই

নাগাল পাই নে কিছুই কোন দিকে।।

 

বেলাতো কাটে না,

বসে থাকি জোয়ার-জলের দিকে চেয়ে-

ভেসে যায় মুক্তিপারের খেয়া,

ভেসে যায় ধনপতির ডিঙা,

ভেসে যায় চলতি বেলার আলোছায়া।

এমন-সময় বাজে তোমার বাঁশি

ভরা জীবনের সুরে,

মরা দিনের নাড়ীর মধ্যে

দব্দবিয়ে ফিরে আসে প্রাণের বেগ।।

 

কী বাজাও তুমি,

জানি নে সে সুর জাগায় কার মনে কী ব্যথা।

বুঝি বাজাও পঞ্চম রাগে

দক্ষিণ হাওয়ার নবযৌবনের ভাটিয়ারি।

শুনতে শুনতে নিজেকে মনে হয়-

যে ছিল পাহাড়তলীর ঝিরঝিরে নদী

তার বুকে হঠাৎ উঠেছে ঘনিয়ে

শ্রাবণের বাদলরাত্রি।

সকালে উঠে দেখা যায় পাড়ি গেছে ভেসে,

একগুঁয়ে পাথরগুলোকে ঠেলা দিচ্ছে

অসহ্য স্রোতের ঘূর্ণিমাতন।।

 

আমার রক্তে নিয়ে আসে তোমার সুর

ঝড়ের ডাক, বন্যার ডাক,

আগুনের ডাক,

পাঁজরের-উপরে-আছাড়-খাওয়া

মরণসাগরের ডাক,

ঘরের-শিকল-নাড়া উদাসী হাওয়ার ডাক।

যেন হাঁক দিয়ে আসে

অপূর্ণের সংকীর্ণ খাদে

পূর্ণ স্রোতের ডাকাতি-

ছিনিয়ে নেবে, ভাসিয়ে দেবে বুঝি।

অঙ্গে অঙ্গে পাক দিয়ে ওঠে

কালবৈশাখীর-ঘূর্ণি-মার-খাওয়া অরণ্যের বকুনি।।

 

ডানা দেয় নি বিধাতা-

তোমার গান দিয়েছে আমার স্বপ্নে

ঝোড়ো আকাশে উড়ো প্রাণের পাগলামি।।

 

ঘরে কাজ করি শান্ত হয়ে;

সবাই বলে ‘ভালো’।

তারা দেখে আমার ইচ্ছার নেই জোর,

সাড়া নেই লোভের,

ঝাপট লাগে মাথার উপর-

ধূলোয় লুটোই মাথা।

দুরন্ত ঠেলায় নিষেধের পাহারা কাত ক’রে ফেলি

নেই এমন বুকের পাটা;

কঠিন করে জানি নে ভালোবাসতে,

কাঁদতে শুধু জানি,

জানি এলিয়ে পড়তে পায়ে।।

 

বাঁশিওয়ালা,

বেজে ওঠে তোমার বাঁশি,

ডাক পড়ে অমর্তলোকে;

সেখানে আপন গরিমায়

উপরে উঠেছে আমার মাথা।

সেখানে কুয়াশার পর্দা-ছেঁড়া

তরুণ সূর্য আমার জীবন।

সেখানে আগুনের ডানা মেলে দেয়

আমার বারণ-না-মানা আগ্রহ,

উড়ে চলে অজানা শূন্যপথে

প্রথম-ক্ষুধায়-অস্থির-গরুড়ের মতো।

জেগে ওঠে বিদ্রোহিনী,

তীক্ষ্ণ চোখের আড়ে জানায় ঘৃণা

চারদিকে ভীরুর ভিড়কে-

কৃশ কুটিলের কাপুরুষতাকে।।

 

বাঁশিওয়ালা,

হয়তো আমাকে দেখতে চেয়েছ তুমি।

জানি নে, ঠিক জায়গাটি কোথায়,

ঠিক সময় কখন,

চিনবে কেমন ক’রে।

দোসরহারা আষাঢ়ের ঝিল্লিঝণক রাত্রে

সেই নারীতো ছায়ারূপে

গেছে তোমার অভিসারে

চোখ-এড়ানো পথে।

সেই অজানাকে কত বসন্তে

পরিয়েছ ছন্দের মালা-

শুকোবে না তার ফুল।।

 

তোমার ডাক শুনে একদিন

ঘরপোষা নির্জীব মেয়ে

অন্ধকার কোণ থেকে বেরিয়ে এল ঘোমটা খসা নারী।

যেন সে হঠাৎ-গাওয়া নতুন ছন্দ বাল্মীকির,

চমক লাগালো তোমাকেই।

সে নামবে না গানের আসন থেকে;

সে লিখবে তোমাকে চিঠি

রাগিনীর আবছায়ায় বসে-

তুমি জানবে না তার ঠিকানা।

ওগো বাঁশিওয়ালা,

সে থাক তোমার বাঁশির সুরের দূরত্বে।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কবিকল্পলতা অনলাইন প্রকাশনীতে কবিতা ও আবৃত্তি প্রকাশের জন্য আজ‌ই যুক্ত হন। (কবিকল্পলতায় প্রকাশিত আবৃত্তি ইউটিউব ভিউজ ও সাবস্ক্রাইবার বাড়াতে সহায়তা করে)