Kalapahar kobita Mohitlal Majumdar কালাপাহাড় কবিতা মোহিতলাল মজুমদার

+ প্রিয়জনের কাছে শেয়ার করুন +

Kalapahar kobita Mohitlal Majumdar কালাপাহাড় কবিতা মোহিতলাল মজুমদার

 

Bangla Kobita, Kalapahar written by Mohitlal Majumdar বাংলা কবিতা, কালাপাহাড় লিখেছেন মোহিতলাল মজুমদার

 

শুনিছ না—ওই দিকে দিকে কাঁদে রক্ত পিশাচ প্রেতের দল!

শবভুক্ যত নিশাচর করে জগৎ জুড়িয়া কী কোলাহল !

দূর-মশালের তপ্ত-নিশাসে ঘামিয়া উঠিছে গগন-শিলা !

ধরণীর বুক থরথরি কাঁপে —একি তাণ্ডব নৃত্য লীলা !

এতদিন পরে উদিল কি আজ সুরাসুর জয়ী যুগাবতার ?

মানুষের পাপ করিতে মোচন, দেবতারে হানি’ ভীম প্রহার,

—কালাপাহাড় ! …

 

কতকাল পরে আজ নরদেহে শোনিতে ধ্বনিছে আগুন গান !

এতদিন শুধু লাল হ’ল বেদী — আজ তার শিখা ধূমায়মান !

আদি হ’তে যত বেদনা জমেছে — বঞ্চনাহত ব্যর্থশ্বাস—

ওই ওঠে তারি প্রলয়-ঝটিকা, ঘোর গর্জন মহোচ্ছাস !

ভয় পায় ভয় ! ভগবান ভাগে ! —প্রেতপুরী বুঝি হয় সাবাড় !

ওই আসে—তার বাজে দুন্দুভি, তামার দামামা, কাড়া-নাকাড় !

—কালাপাহাড় !

 

কোটি-আঁখি-ঝরা অশ্রু-নিঝর ঝরিল চরণ-পাষাণ-মূলে,

ক্ষয় হ’ল শুধু শিলা-চত্তর — অন্ধের আঁখি গেল না খুলে !

জীবের চেতনা জড়ে বিলাইয়া আঁধারিল কত শুক্ল নিশা !

রক্ত-লোলুপ লোল-রসনায় দানিল নিজেরি অমৃত-তৃষা !

আজ তারি শেষ ! মোহ অবসান ! —দেবতা-দমন যুগাবতার !

আসে ওই ! তার বাজে দুন্দুভি—বাজায় দামামা, কাড়া-নাকাড় !

—কালাপাহাড় !

 

বাজে দুন্দুভি, তামার দামামা—বাজে কী ভীষণ কাড়া নাকাড় !

অগ্নি-পতাকা উড়িছে ঈশানে, দুলিছে তাহাতে উল্কা-হার !

অসির ফলকে অশনি ঝলকে—গলে যায় যত ত্রিশূল চুড়া !

ভৈরব রবে মুর্ছিত ধরা, আকাশের ছাদ হয় বা গুঁড়া !

পূজারী অথির, দেবতা বধির—ঘন্টার রোলে জাগে না আর !

অরাতির দাপে আরতি ফুরায়—নাম শুনে হয় বুক অসাড় !

—কালাপাহাড় !

 

নিজ হাতে পরি’ শিকলি দু’পায় দুর্বল করে যাহারে নতি,

হাত জোড় করি’ যাচনা যাহারে, আজ হের তার কি দুর্গতি !

কোথায় পিনাক ? —ডমরু কোথায় ? কোথায় চক্র সুদর্শন ?

মানুষের কাছে বরাভয় মাগে মন্দির-বাসী অমরগণ !

ছাড়ি’ লোকালয় দেবতা পলায় সাত-সাগরের সীমানা-পার !

ভয়ংকরের ভুল ভেঙে যায় ! বাজায় দামামা, কাড়া-নাকাড়,

—কালাপাহাড় !

 

কল্প-কালের কল্পনা যত, শিশু-মানবের নরক-ভয়—

নিবারণ করি’ উদিল আজিকে দৈত্য-দানব-পুরঞ্জয় !

দেহের দেউলে দেবতা নিবসে—তার অপমান দুর্বিষহ !

অন্তরে হ’ল বাহিরের দাস মানুষের পিতা প্রপিতামহ !

স্তম্ভিত হৃৎপিণ্ডের ‘পরে তুলেছে অচল পাষাণ-ভার—

সহিবে কি সেই নিদারুণ গ্লানি মানবসিংহ যুগাবতার

—কালাপাহাড় ?

 

ভেঙে ফেল’ মঠ মন্দির-চূড়া, দারু-শিলা কর নিমজ্জন !

বলি-উপচার ধূপদীপারতি রসাতলে দাও বিসর্জ্জন !

নাই বাহ্মণ, ম্লেচ্ছ-যবন, নাই ভগবান—ভক্ত নাই,

যুগে যুগে শুধু মানুষ আছে রে ! মানুষের বুকে রক্ত চাই !

ছাড়ি’ লোকালয় দেবতা পলায় সাত-সাগরের সীমানা-পার !

ভয়ংকরের ভয় ভেঙে যায়, —বাজায় দামামা, কাড়া-নাকাড়,

—কালাপাহাড় !

 

ব্রাহ্মণ যুবা যবনে মিলেছে, পবন মিলেছে বহ্নি সাথে !

এ কোন্ বিধাতা বজ্র ধরেছে নবসৃষ্টির প্রলয়-রাতে !

মরুর মর্ম বিদারি’ বহিছে সুধার উত্স পিপাসাহরা !

কল্লোলে তার বন্যার রোল ! —কূল ভেঙে বুঝি ভাসায় ধরা !

ওরে ভয় নাই ! —মুকুটে তাহার নবারুণ-ছটা, ময়ূখ হার।

কাল নিশীথিনী লুকায় বসনে !—সবে দিল তাই নাম তাহার

কালাপাহাড় !

 

শুনিছ না ওই— দিকে দিকে কাঁদে রক্তজপিশাচ প্রেতের পাল !

দূর-মশালের তপ্ত-নিশাসে ঘামিয়া উঠিছে গগন-ভাল !

কার পথে-পথে গিরি নুয়ে যায় ! কটাক্ষে রবি অস্তমান !

খড়্গ কাহার থির-বিদ্যুৎ ! ধূলি-ধ্বজা কার মেঘ-সমান !

ভয় পায় ভয় ! ভগবান ভাগে ! প্রেতপুরী বুঝি হয় সাবাড় !

ওই আসে ! ওই বাজে দুন্দুভি—বাজায় দামামা, কাড়া-নাকাড়

—কালাপাহাড় !

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কবিকল্পলতা অনলাইন প্রকাশনীতে কবিতা ও আবৃত্তি প্রকাশের জন্য আজ‌ই যুক্ত হন। (কবিকল্পলতায় প্রকাশিত আবৃত্তি ইউটিউব ভিউজ ও সাবস্ক্রাইবার বাড়াতে সহায়তা করে)