Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors
Search in posts
Search in pages

Pujarini kobita Rabindranath Tagore পূজারিনী কবিতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

+ প্রিয়জনের কাছে শেয়ার করুন +

Pujarini kobita Rabindranath Tagore পূজারিনী কবিতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

 

Bengali Poem, Pujarini kobita lyrics written by Rabindranath Tagore বাংলা কবিতা, পূজারিনী লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

 

নৃপতি বিম্বিসার

নমিয়া বুদ্ধে মাগিয়া লইলা

পাদনখকণা তাঁর।

স্থাপিয়া নিভৃত প্রাসাদকাননে

তাহারি উপরে রচিলা যতনে

অতি অপরূপ শিলাময় স্তূপ

শিল্পশোভার সার।

 

সন্ধ্যাবেলায় শুচিবাস পরি

রাজবধূ রাজবালা

আসিতেন ফুল সাজায়ে ডালায়,

স্তূপপদমূলে সোনার থালায়

আপনার হাতে দিতেন জ্বালায়ে

কনকপ্রদীপমালা।

 

অজাতশত্রু রাজা হল যবে,

পিতার আসনে আসি

পিতার ধর্ম শোণিতের স্রোতে

মুছিয়া ফেলিল রাজপুরী হতে—

সঁপিল যজ্ঞ-অনল-আলোতে

বৌদ্ধশাস্ত্ররাশি।

 

কহিল ডাকিয়া অজাতশত্রু

রাজপুরনারী সবে,

“বেদ ব্রাহ্মণ রাজা ছাড়া আর

কিছু নাই ভবে পূজা করিবার

এই ক’টি কথা জেনো মনে সার—

ভুলিলে বিপদ হবে।’

 

সেদিন শারদ-দিবা-অবসান—

শ্রীমতী নামে সে দাসী

পুণ্যশীতল সলিলে নাহিয়া,

পুষ্পপ্রদীপ থালায় বাহিয়া,

রাজমহিষীর চরণে চাহিয়া

নীরবে দাঁড়ালো আসি।

 

শিহরি সভয়ে মহিষী কহিলা,

“এ কথা নাহি কি মনে,

অজাতশত্রু করেছে রটনা

স্তূপে যে করিবে অর্ঘ্যরচনা

শূলের উপরে মরিবে সে জনা

অথবা নির্বাসনে?’

 

সেথা হতে ফিরি গেল চলি ধীরে

বধূ অমিতার ঘরে।

সমুখে রাখিয়া স্বর্ণমুকুর

বাঁধিতেছিল সে দীর্ঘ চিকুর,

আঁকিতেছিল সে যত্নে সিঁদুর

সীমন্তসীমা-‘পরে।

 

শ্রীমতীরে হেরি বাঁকি গেল রেখা,

কাঁপি গেল তার হাত—

কহিল, “অবোধ, কী সাহস-বলে

এনেছিস পূজা! এখনি যা চলে।

কে কোথা দেখিবে, ঘটিবে তা হলে

বিষম বিপদপাত।’

 

অস্তরবির রশ্মি-আভায়

খোলা জানালার ধারে

কুমারী শুক্লা বসি একাকিনী

পড়িতে নিরত কাব্যকাহিনী,

চমকি উঠিল শুনি কিংকিণী—

চাহিয়া দেখিল দ্বারে।

 

শ্রীমতীরে হেরি পুঁথি রাখি ভূমে

দ্রুতপদে গেল কাছে।

কহে সাবধানে তার কানে কানে,

“রাজার আদেশ আজি কে না জানে,

এমন ক’রে কি মরণের পানে

ছুটিয়া চলিতে আছে!’

 

দ্বার হতে দ্বারে ফিরিল শ্রীমতী

লইয়া অর্ঘ্যথালি।

“হে পুরবাসিনী’ সবে ডাকি কয়

“হয়েছে প্রভুর পূজার সময়’—

শুনি ঘরে ঘরে কেহ পায় ভয়,

কেহ দেয় রাতে গালি।

 

দিবসের শেষ আলোক মিলালো

নগরসৌধ-‘পরে।

পথ জনহীন আঁধারে বিলীন,

কলকোলাহল হয়ে এল ক্ষীণ—

আরতিঘণ্টা ধ্বনিল প্রাচীন

রাজদেবালয়ঘরে।

 

শারদনিশির স্বচ্ছ তিমিরে

তারা অগণ্য জ্বলে।

সিংহদুয়ার বাজিল বিষাণ,

বন্দীরা ধরে সন্ধ্যার তান,

“মন্ত্রণাসভা হল সমাধান’

দ্বারী ফুকারিয়া বলে।

 

এমন সময়ে হেরিল চমকি

প্রাসাদে প্রহরী যত—

রাজার বিজন কানন-মাঝারে

স্তূপপদমূলে গহন আঁধারে

জ্বলিতেছে কেন যেন সারে সারে

প্রদীপমালার মতো!

 

মুক্তকৃপাণে পুররক্ষক

তখনি ছুটিয়া আসি

শুধালো, “কে তুই ওরে দুর্মতি,

মরিবার তরে করিস আরতি!’

মধুর কণ্ঠে শুনিল, ” শ্রীমতী,

আমি বুদ্ধের দাসী।’

 

সেদিন শুভ্র পাষাণফলকে

পড়িল রক্তলিখা।

সেদিন শারদ স্বচ্ছ নিশীথে

প্রাসাদকাননে নীরবে নিভৃতে

স্তূপপদমূলে নিবিল চকিতে

শেষ আরতির শিখা!

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কবিকল্পলতা অনলাইন প্রকাশনীতে কবিতা ও আবৃত্তি প্রকাশের জন্য আজ‌ই যুক্ত হন। (কবিকল্পলতায় প্রকাশিত আবৃত্তি ইউটিউব ভিউজ ও সাবস্ক্রাইবার বাড়াতে সহায়তা করে)