Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors
Search in posts
Search in pages

Draupadi jonmo kobita poem lyrics দ্রৌপদী জন্ম কবিতা -মল্লিকা সেনগুপ্ত

+ প্রিয়জনের কাছে শেয়ার করুন +

Draupadi jonmo kobita poem lyrics দ্রৌপদী জন্ম কবিতা -মল্লিকা সেনগুপ্ত

 

Bengali Poem (Bangla Kobita), Draupadi jonmo written by Mallika Sengupta বাংলা কবিতা, দ্রৌপদী জন্ম লিখেছেন মল্লিকা সেনগুপ্ত

 

হস্তিনাপুরের এক গৃহবধূ, সেই আমি আবার জন্মেছি

ভারতবর্ষের দিকে যে মেয়েটি এই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিল-

 

স্ত্রীকে পণ রাখবার অধিকার কে দিল স্বামীকে?

তার মতো প্রতিবাদী হাজার বছর ধরে কখনও দেখেছো।

 

সেই দিন নেশাগ্রস্ত রাজা যুধিষ্ঠির

ভারত কাঁপানো সেই কুপ্রস্তাব পেশ করলেন

 

যিনি নন অতিখর্বা, অতি কৃষ্ণা, কৃশা বা রক্তাভ

পদ্মপলাশ চোখ সেই নারী দ্রৌপদীকে পণ রাখলাম…

 

পৃথিবী তখনও কিন্তু ধ্বংস হয়ে যায়নি মানুষ!

ভারতের ইতিহাসে বাকি ছিল আরও দুর্ঘটনা

 

সভাঘর ক্ষুব্ধ হল, বৃদ্ধেরা ধিক্কার দিল, ভীষ্ম হতবাক

সেইদিন, আপনারা জানেন, বিদুর এবং গুরু দ্রোণাচার্য

 

দু’হাত মাথায় দিয়ে চুপচাপ মোহগ্রস্ত বসে রইলেন

খুশি গোপন না করে ধৃতরাষ্ট্র বললেন, কে? জিতল? কে?

 

পিনপতনের শব্দ শোনা যায়, সভাঘর এমন নীরব

দুই পক্ষ উদগ্রীব। শকুনির পাশা বলে উঠল – জিতেছি

 

উল্লাসে পাগল কর্ণ হেসে উঠলেন আর ওই দুর্যোধন

বললেন, প্রাতিকামী, দাসী দ্রৌপদীকে নিয়ে এস সভাঘরে

 

আমার প্রথম স্বামী অধোমুখ, দ্বিতীয়ের অবরুদ্ধ ক্রোধ

শান্ত করেন তৃতীয়। ফাল্গুনি তুমিও এত ক্লীব ছিলে হায়!

 

আমি প্রশ্ন পাঠালাম- ‘প্রাতিকামী, জেনে এস প্রাজ্ঞদের থেকে

নিজেকে না দ্রৌপদীকে, ধর্মরাজ কোন বাজী আগে হেরেছেন!

 

উত্তর এল না কোনও। পরিবর্তে ধর্মরাজ বলে পাঠালেন

রজঃস্বলা একবস্ত্রা, কাঁদতে কাঁদতে তুমি শ্বশুরের সামনে দাঁড়াও

 

টেনে ধরলেন চুল দুঃশাসন এসে, সেই মেঘবর্ণ চুল

যেখানে ফাল্গুনি তুমি মুখ গুঁজে শুয়েছিলে নরম নিশীথে

 

কন্দর্প নিন্দিত কান্তি ভীমসেন এই চুলে খেলা করতেন

এই চুলের সুগন্ধে স্নায়ু শান্ত রাখতেন রাজা যুধিষ্ঠির

 

মাতৃহারা সহদেব এবং নকুল এই চুলের রহস্যে

ভুলে থাকতেন শোক। স্বয়ং জননী কুন্তী এই চুলে খোঁপা বানাতেন

 

দুঃশাসন সেই চুল টানতে টানতে এনে প্রকাশ্য সভায়

দাঁড় করালেন এক অসূর্যম্পশ্যা মহিষীকে।

তোমরা পুরুষজন, বাঁ হাতে নারীকে ঠেলে অন্দরে পাঠাও

ডান হাতে তোমরাও গা থেকে কাপড় টেনে খুলে নাও উন্মুক্ত বাজারে

 

তোমরা বিধান দাও, তোমরাই বোবা হয়ে থাক

পুরুষে পুরুষে যুদ্ধ, প্রতিশোধ রমণীর শ্লীলতাহানিতে

 

স্খলিত বসনে সভা ঢেকে গেল, দ্রৌপদীর শাড়ি খুলল না

তন্তুর কৌশলে আমি প্রমত্ত কৌরবঘরে লজ্জা রাখলাম

 

ওরে দুঃশাসন শোন, শত দেবতাও এসে তোকে বাঁচাবে না

মহাযুদ্ধে পাণ্ডবেরা প্রতিশোধ নেবে এই দারুণ লজ্জার

 

ধিক কুরুবৃদ্ধগণ, ধিক্ ঠুঁটো জগন্নাথ ভারতবাসীকে

আপনারা চুপচাপ বসে দেখলেন এই অধর্মের জয়!

 

শাড়ি শাড়ি আর শাড়ি রেশমের সাতরঙে ঢেকে গেল কৌরবের সভা

তবু গিঁট খুলল না, লজ্জা বস্ত্রটুকু তবু থেকে গেল দুঃস্বপ্ন শরীরে

 

শরীর দুঃস্বপ্ন কেন? লেলিহান এ শরীর ছুঁতে চেয়ে পুড়ে গেছে নগর বন্দর

এই মুখ চুম্বকের মতো টেনে এনেছিলো নদীতীরে অসংখ্য তরণী

 

আমার মতোই এক অভিশপ্ত রূপসী না আমিই স্বয়ং?

কে যেন আমার মুখ দেখে বলেছিল থেমে থাকা ইতিহাস!

 

তোমার সৌন্দর্য দেখে অন্য সব নারীদের বানরি লাগছে-

কে বলেছে? বলেছিল জয়দ্রথ বনবাসে তাড়া করে এসে-

 

হে পুরুষ!

রূপ দেখলেই কেন হাতের মুঠোয় চাও জ্যান্ত মানবীকে!

না পেলে তারই শাড়ি টেনে ধরে অশ্লীল হাসিতে

 

তার মুখ কালো করে দিতে চাও। বলো-

দ্রৌপদীর বহু পতি, বেশ্যা অতএব

 

আমি যদি বেশ্যা হই, তুমিও পুরুষ বেশ্যা কর্ণ মহামতি!

তোমারও শয্যায় আসে বহু পত্নী, বিবিধ স্ত্রীলোক

 

তুমি যে নিয়মে চল সে নিয়মে অধিকার আমারও থাকুক

তোমরা যে গ্রন্থ লেখ সেই গ্রন্থ আমরাও উল্টে দিতে পারি

 

শোন কর্ণ, শোন সভাজন

তোমাদের ছাঁইপাশ বিধিনিষেধের দিকে একটি বঙ্কিম প্রশ্ন

 

যখন আমি প্রশ্ন করি

তোমরা ভয় পাও

ভীষ্ম পিতামহ আমার

তুমিও মুখ লুকাও!

 

ধৃতরাষ্ট্র বলুন, আমি

কলঙ্কের যোগ্য কি না আজ

শৃগাল গাধা উঠল ডেকে

অশুভ সব শব্দ মহারাজ

 

দুর্যোধন ঊরু দেখান

ঊরুর নীচে শানিত অপমান

হতচেতন যুধিষ্ঠির

বোঝেন না তো কিছুই মহাপ্রাণ!

 

ঝড়ের মতো ফুঁসে ওঠেন

একাই ভীমসেন

অর্জুনের আঙুল তাকে

শান্ত রাখছেন

 

এত সকল কাণ্ড শেষে

ধৃতরাষ্ট্র আসরে নামলেন

বলেন তিনি, কৃষ্ণা তুমি

কি বর চাও বল

তারপর আমি দু’টিমাত্র বর চাইলাম। প্রথম, হে পিতা, যদি প্রসন্ন থাকেন তো এই বর দিন যে সর্বধর্মচারী যুধিষ্ঠির যেন দাসত্ব থেকে মুক্ত হন। দ্বিতীয় বরে দাসত্বমুক্ত হোক বীরশ্রেষ্ঠ ভীমসেন, অর্জুন, নকুল ও সহদেব। বর চেয়েছিলাম করজোরে, দাঁতে দাঁত চেপে, যুধিষ্ঠিরের ধর্ম আর অর্জুনের গাণ্ডীবের প্রতি আমার সমস্ত সন্দেহ অপ্রকাশিত রেখে। বিশ্ববন্দিত স্বামীদের প্রতি আমার ক্রোধ ও সন্দেহ তো প্রকাশ করা যাবে না, সভাজনের কাছে তারা হাস্যাস্পদ হবেন। ধৃতরাষ্ট্র তৃতীয় বর নিতে অনুরোধ করলেন। আমি নিলাম না। কারণ হে, সভাজন, লোভে ধর্মনাশ হয়। বৈশ্য এক বর, ক্ষত্রিয়াণী দুই বর, রাজা তিন বর এবং ব্রাহ্মণ একশত বর নিতে পারেন। আপনাদের মহাগ্রন্থে এই বিধান আছে। যে রাজ্যপাট যুধিষ্ঠির নিজদোষে হারিয়েছেন আমি তৃতীয় বর চেয়ে সেই রাজ্য ফেরত চাইব না। রাজ্য উদ্ধার করবেন আমার পৌরুষগর্বী স্বামীরা, কারণ আপনাদের মহাগ্রন্থে রাজত্ব বিস্তারই পৌরুষের শর্ত। আমার এই আশ্চর্য সিদ্ধান্তে সভা হতবাক হল। শুধু কর্ণ বললেন, দ্রৌপদী দুঃখ সাগরে ডুবে থাকা পাণ্ডবদের নৌকার মতো পার করলেন। ইতিপূর্বে আর কোনও নারী এরকম কাজ করেছেন বলে শুনিনি। আমার স্বামীরা মাথা নিচু করে বসে থাকলেন।

এ ছাড়া আর কিইবা আমি করতে পারতাম!
অনেক পরে আমার ক্রোধ বিস্ফারিত হল
যেদিন বনবাসের ঘরে কৃষ্ণ এসে সামনে দাঁড়ালেন
কৃষ্ণ তুমি এসেছ যদি শোনো আমার কথা
আমার কোনও যুধিষ্ঠির ভীমার্জুন নেই
আমার কোনও পুরুষ নেই দয়িত নেই
বন্ধু নেই পিতা বা ভ্রাতা নেই
আমার কোনও সমাজ নেই পায়ের মাটি নেই
মধুসূদন তুমিও নেই তুমিও পাশে ছিলে না সেই দিন

আমাকে যারা শোণিতময় দেখেও হেসেছিল
আমাকে যারা কলুষ হাতে স্পর্শ করেছিল
এখনও তারা পৃথিবী জুড়ে দাপটে বেঁচে আছে
এবং আমার স্বামীরা আজ সন্ধি চাইছেন!
ধিক আমার বেঁচে থাকার দুঃখ-ইতিহাসে

তারপর পদ্মকোষের মতো দুই হাতে মুখ ঢেকে আমাকে কাঁদতে দেখে কৃষ্ণ বললেন, ভাবিনী, তুমি যাদের ওপর ক্রুদ্ধ হয়েছ তারা ধ্বংস হবে অর্জুনের শরে আচ্ছন্ন হয়ে মাটিতে শোবে। তুমি রাজমহিষী হবে যদি আকাশ পতিত হয়, হিমালয় শীর্ণ হয়, পৃথিবী খণ্ড খণ্ড হয়, সমুদ্র শুষ্ক হয়, তথাপি আমার বাক্য ব্যর্থ হবে না।

আমার অপমানের ক্ষতে
সেই প্রথম মলম পড়েছিল
আমার মরুভূমির বালি
সেই প্রথম অশ্রু শিখেছিল
কৃষ্ণ তুমি আমার মনে
সেই প্রথম বন্ধু হয়েছিলে
সেই প্রথম ভারতভূমি
তোমার পায়ে প্রণাম করেছিল
এইভাবে কৃষ্ণ তো দেবতা হলেন।

দ্রৌপদীর চোখে তিনি তো রীতিমতো হিরো, হিম্যান। কিন্তু ভাবুন তো বেচারা রাধার কথা। তার তো যত সর্বনাশের মুলে কৃষ্ণ স্বয়ং। বন্ধু – বন্ধু থাকা বেশ ভাল, কোনও টেনশন হয় না, যেমন দ্রৌপদী আর কৃষ্ণ। সখী দ্রৌপদীর জন্য যেভাবে জান লড়িয়ে দিয়েছিলেন কৃষ্ণ, সেরকম রাধার জন্য তো করেন নি! ঐজন্যই তো মুশকিল। বন্ধুরা হুটহাট করে প্রেম নিবেদন করে বসলেই সাড়ে সব্বেনাশ। প্রেম গ্রহণ করলেও বিপদ, উল্কার মত জ্বালিয়ে দেবে। আর প্রেম গ্রহন না করলে তো আরও বিপদ, যাকে ফিরিয়ে দেব তার পুরুষতান্ত্রিক ইগো জেগে উঠবে। অ্যাসিড বাল্ব ছুঁড়বে। এসব দেখলে শুনলে বড় মন খারাপ হয়। তখন মাঝে মাঝে গঙ্গার ধারে গিয়ে বসে থাকি। গঙ্গা কি সুন্দর। এখনো কি সুন্দর। এখনও কলকাতার সেরা অভিজ্ঞতা গঙ্গাবক্ষে লঞ্চ ভ্রমণ। লঞ্চের ডেকে বসে, দেখুন একবার, পুরো বাংলার ইতিহাস উঠে আসবে সামনে,পুরো গঙ্গামাতৃক ভূখণ্ডের ছবি। এত যে সুন্দর আমাদের গঙ্গা, তাকেও কালি ছোঁড়ে লোকে! ওফ্ দমবন্ধ হয়ে আসে ভাবলে। মনে হয় যেন আমার গায়েই কালি ঢেলে দিচ্ছে কেউ। আমারই মুখে বাল্ব মারছে কোন দুষ্টু প্রেমিক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কবিকল্পলতা অনলাইন প্রকাশনীতে কবিতা ও আবৃত্তি প্রকাশের জন্য আজ‌ই যুক্ত হন। (কবিকল্পলতায় প্রকাশিত আবৃত্তি ইউটিউব ভিউজ ও সাবস্ক্রাইবার বাড়াতে সহায়তা করে)