যখন তোমার ফুলবাগানে – পূর্ণেন্দু পত্রী

প্রিয়জনের কাছে শেয়ার করুন :—

কালকে তোমার ডাল ভেঙেছি, ফুল ছিঁড়েছি।

অপরাধের হাওয়ায় ছিল ত্বরিৎগতি

সেই কাঁপুনি ঝাউ পাতাতে, ক্ষয়ক্ষতি যার গায়ের ধুলো

এমন মাদল, যার ডাকে বন আপনি দোলে

পাহাড় ঠেলে পরাণ-সখা বন্ধু আসে আলিঙ্গনে

সমস্ত রাত পায়ে পরায় সর্বস্বান্ত নাচের নেশা।

দস্যু যেমন হাতড়ে খোঁজে বাউটি বালা কেউর কাঁকন,

জলে যেমন সাপের ছোবল

আলগা মাটির আঁচল টানে

দ্বিধাকাতর দেয়াল ভাঙে নোনতা জিভে

কালকে তোমার ফুলবাগনে তেমনি আমার নখের আঁচড়

লজ্জা দিয়ে সাজানো ঘর লুট করেছে।

 

কালকে তোমার ডাল ভেঙেছি, ফুল ছিঁড়েছি ।

ঝাঁপ দিয়েছি সর্বনাশের গোল আগুনে

উপরে কাঁটা নীচের কাঁটা শুকনো শেঁকুল

তার ভিতরে লুকিয়ে আঁটা সন্নেসীদের কাতান বঁটি

ধর্ম-কর্ম-নিয়ম-নীতি।

ঝাঁপ দিয়েছি উপোস থেকে ইচ্ছা-সুখের লাল আগুনে

 

পড়বে কিছু পালক পুড়ুক

অশ্বমেধের ভস্ম উডুক বাতাস চিরে।

আলগা মুঠো, পাক, না কিছু খড়ের কুটো।

হ্যাংলা পাখি যা খেতে চায় ঠুকরিয়ে খাক।

 

লেপ তোষকের উষ্ণ আদর না যদি পাই

একটুখানি আঁচল পেলেই গায়ের চাদর।

অনেক দিনের হাপিত্যেশে নীচে শোকের কালি

বুকের মধ্যে অনেকখানি জায়গা খালি শয্যাপাতার

তুলোর বালিশ ধুলোয় কেন মাখায় থাকুক।

 

কালকে তোমার ডাল ভেঙেছি, ফুল ছিঁড়েছি।

কালকে ভীষণ গোঁয়ার্তুমি ঝাপটে ছিল পিঠের ডানায়

রক্তনদী কানায় কানায় উথাল-পাথাল

কামড়ে ছিঁড়ে নিংড়ে খাবে, ইচ্ছে চুরি

সমস্ত ফুল বৃন্ত কুঁড়ি, ডালপালা মুল

এমনকি তার পরাগ শুদ্ধ গর্তকেশর।

কালকে হঠাৎ প্রচণ্ড ঝড় ঝাঁকড়া চুলে

শাদা হাড়ের দরজা খুলে রক্তে ঢুকে

খেপিয়েছিল পাঁকের মধ্যে ঘুমিয়ে থাকা জন্তুটাকে।

বাঁধ মানে না, ব্যাধ মানে না এমন দামাল

একটুখানি রক্তমাখা মিষ্টি হাসির গন্ধ পেলেই

পলাশ যেমন এক লহমায় রাঙা মশাল জ্বালায় বনে

তেমনি জ্বালায় নিজের চোখে বাঘের চোখের অগ্নিকণা

মুখস্থ সব অরণ্যানীর পথের বাঁকে

আক্রমণের থাবা সাজায় সংগোপনে,

বনহরিনীর চরণধবনি কখন আসে কখন ভাসে।

 

সেই কাঙালই সব কেড়েছে কালকে তোমার

কালকে তোমার ডাল ভেঙেছি, ফুল ছিঁড়েছি।

 

আজকে দেখি খালি মুঠোয়

অন্য রকম কষ্ট লুটোয় ছটফটিয়ে।

বাসর-ভাঙা বাসি ফুলে উড়ছে মাছি

কেবল স্মতি গন্ধ আছে, তাইতে আছি গা ডুবিয়ে।

ডুবতে ডুবতে সব চলে যায় অন্য পারে

সুর্য থেকে সন্ধ্যা ঝরে শিশির-কাতর।

আরো অনেক ডুবতে থাকে হয়তো ছায়া, হয়তো ছবি

বৃহৎ শাড়ি যেমন ডোবে বালতি খানেক সাবান জলে।

আষ্টেপৃষ্ঠে কোমর দড়ি কেউ কি বাঁধে দিগন্তকে ?

নৌকাডুবির মতন গাঢ় আর্তনাদে

কেউ কি কাঁদে আঁধার-ভর্তি হলুদ বনে?

কালকে ছিল ঝলমলানো, আজকে বড় ময়লা ভুবন

এই ভুবনে আমার মতো করুণ কোনো ভিখারী নেই।

বুঝলে শুধু বুঝবে তুমি, তাকিয়ে দেখ

দুই হাতে দুই শুণ্য সাজি, দাঁড়িয়ে আছি

উচ্ছৃসিত পুষ্পরাজি যখন তোমার ফুলবাগানে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


কবিকল্পলতা অনলাইন প্রকাশনীতে কবিতার আড্ডায় আপনার স্বরচিত কবিতা ও আবৃত্তি প্রকাশের জন্য আজ‌ই যুক্ত হন।