Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors
Search in posts
Search in pages

Kobita Palli janani kobi Jashim Uddin কবিতা পল্লী জননী কবি জসীম উদ্দীন

+ প্রিয়জনের কাছে শেয়ার করুন +

 

Kobita Palli janani kobi Jashim Uddin কবিতা পল্লী জননী কবি জসীম উদ্দীন

 

Bangla Kobita, Palli janani written by Kobi Jashim Uddin বাংলা কবিতা, পল্লী জননী লিখেছেন কবি জসীম উদ্দীন

 

রাত থম্ থম্ স্তব্ধ নিঝুম, ঘোর-ঘোর-আন্ধার,

নিশ্বাস্ ফেলি তাও শোনা যায় নাই কোথা সাড়া কার।

রুগ্ন ছেলের শিয়রে বসিয়া একেলা জাগিছে মাতা,

করুণ চাহনি ঘুম্ ঘুম্ যেন ঢুলিছে চোখের পাতা।

শিয়রের কাছে নিবু নিবু দীপ ঘুরিয়া ঘুরিয়া জ্বলে,

তারি সাথে সাথে বিরহী মায়ের একেলা পরাণ দোলে।

 

ভন্ ভন্ ভন্ জমাট বেঁধেছে বুনো মশকের গান

এঁদো ডোবা হতে বাহিছে কঠোর পচান পাতার ঘ্রাণ।

ছোটকুঁড়ে ঘর, বেড়ার ফাঁকেতে আসিছে শীতের বায়ু,

শিয়রে বাসিয়া মনে মনে মাতা গণিছে ছেলের আয়ু।

 

ছেলে কয়, ‘মারে, কত রাত আছে, কখন সকাল হবে,

ভাল যে লাগে না, এমনি করিয়া কেবা শুয়ে থাকে কবে।

মা কয়, ‘বাছারে ! চুপটী করিয়া ঘুমেতি একটি বার’,

ছেলে রেগে কয়, ‘ঘুম যে আসেনা কি করিব আমি তার?’

পাণ্ডুর গালে চুমো খায় মাতা। সারা গায়ে দেয় হাত,

পারে যদি বুকে যত স্নেহ আছে ঢেলে দেয় তারি সাথ।

নামাযের ঘরে মোমবাতী মানে, দরগায় মানে দান,

ছেলেরে তাহার ভাল কোরে দাও কাঁদে জননীর প্রাণ।

ভাল কোরে দাও আল্লা রছুল ভাল করে দাও পীর,

কহিতে কহিতে মুখখানি ভাসে বহিয়া নয়ন নীর !

 

বাঁশ বনে বসি ডাকে কানা কুয়ে, রাতের আঁধার ঠেলি,

বাদুড় পাখার বাতাসেতে পড়ে সুপারীর বন হেলি।

চলে বুনো পথে জোনাকী মেয়েরা কুয়াশা কাফন ধরি

…….. ! কিবা শঙ্কায় মার পরাণ উঠিছে ভরি।

যে কথা ভাবিতে পরাণ শিহরে তাই ভাসে হিয়া কোণে,

বালাই বালাই, ভাল হবে যাদু মনে মনে জাল বোনে।

ছেলে কয়, ‘মাগো, পায়ে পড়ি বল ভাল যদি হই কাল,

করিমের সাথে খেলিবারে গেলে দিবে নাত তুমি গাল।

আচ্ছা মা বলো, এমন হয় না রহিম চাচার ঝাড়া,

এখনি আমারে এত রোগ হোতে করিতে পারেত খাড়া ?’

মা কেবল বসি রুগ্ন ছেলের মুখ পানে আঁখি মেলে,

ভাসা ভাসা তার যত কথা যেন সারা প্রাণ দিয়ে গেলে।

 

‘শোন মা, আমার লাটাই কিন্তু রাখিও যতন করে,

রাখিও ঢ্যাঁপের মোয়া বেঁধে তুমি সাত-নরি সিকা ভরে।

খেজুরে গুড়ের নয়া পাটালিতে হুড়–মের কোলা ভরে।

ফুলঝুরি সিকা সাজাইয়া রেখো আমার সমুখ পারে।’

ছেলে চুপ করে, মাও ধীরে ধীরে মাথায় বুলায় হাত,

বাহিরেতে নাচে জোনাকী আলোয় থম্ থম্ কাল রাত।

 

রুগ্ন ছেলের শিয়রে বসিয়া কত কথা পড়ে মনে,

কোন্ দিন সে যে মায়েরে না বলে গিয়াছিল দুর বনে।

সাঁঝ হোয়ে গেল তবু আসে নাকো, আই চাই মার প্রাণে,

হঠাৎ শুনিল আসিতেছে ছেলে হর্ষে করিয়া গান।

এক কোঁচ ভরা বেথুল তাহার ঝামুর ঝুমুর বাজে,

ওরে মুখপোড়া কোথা গিয়াছিলি এমনি এ কালি সাঁঝে?

 

কত কথা আজ মনে পড়ে তার, গরীবের ঘর তার,

ছোট খাট কত বায়না ছেলের পারে নাই মিটাবার।

আড়ঙের দিনে পুতুল কিনিতে পয়সা জোটেনি তাই,

বলেছে আমরা, মোসলমানের আড়ঙ দেখিতে নাই।

করিম সে গেল ? আজিজ চলিল ? এমনি প্রশ্ন মালা,

উত্তর দিকে দুখিনী মায়ের দ্বিগুণ বাড়িত জ্বালা।

আজও রোগে তার পথ্য জোটেনি, ওষুধ হয়নি আনা,

ঝড়ে কাঁপে যেন নীড়ের পাখিটী জড়ায়ে মায়ের ডানা।

 

ঘরের চালেতে ধুতুম ডাকিছে, অকল্যাণ এ সুর,

মরণের দূত এল বুঝি হয় হাঁকে মায়, দূর-দূর।

পচা ডোবা হতে বিরহিনী ডাক ডাকিতেছে ঝুরি’ ঝুরি,

কৃষাণ ছেলেরা কালকে তাহার বাচ্চা করেছে চুরি।

ফেরে ভন্ ভন্ মশা দলে দলে, বুড়ো পাতা ঝরে বনে,

ফোঁটায় ফোঁটায় পাতা-চোঁয়া জল ঝরিছে তাহার সনে।

রুগ্ন ছেলের শিয়রে বসিয়া একেলা জাগিছে মাতা,

সম্মুখে তার ঘোর কুজ্ঝটি মহাকাল রাত পাতা।

পার্শ্বে জ্বলিয়া মাটির প্রদীপ বাতাসে জমায় খেল;

আঁধারের সাথে বুঝিয়া তাহার ফুরায়ে এসেছে তেল।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কবিকল্পলতা অনলাইন প্রকাশনীতে কবিতা ও আবৃত্তি প্রকাশের জন্য আজ‌ই যুক্ত হন। (কবিকল্পলতায় প্রকাশিত আবৃত্তি ইউটিউব ভিউজ ও সাবস্ক্রাইবার বাড়াতে সহায়তা করে)