Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors
Search in posts
Search in pages

Campe kobita poem lyrics ক্যাম্পে কবিতা – জীবনানন্দ দাশ

+ প্রিয়জনের কাছে শেয়ার করুন +

Campe kobita poem lyrics ক্যাম্পে কবিতা - জীবনানন্দ দাশ

 

Bangla Kobita, Campe written by Jibanananda Das বাংলা কবিতা, ক্যাম্পে লিখেছেন জীবনানন্দ দাশ

 

এখানে বনের কাছে ক্যাম্প আমি ফেলিয়াছি;

সারারাত দখিনা বাতাসে

আকাশের চাঁদের আলোয়

এক ঘাইহরিণীর ডাকে শুনি –

কাহারে সে ডাকে!

 

কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;

বনের ভিতরে আজ শিকারীরা আসিয়াছে,

আমিও তাদের ঘ্রাণ পাই যেন,

এইখানে বিছানায় শুয়ে শুয়ে

ঘুম আর আসে নাকো

বসন্তের রাতে।

 

চারি পাশে বনের বিস্ময়,

চৈত্রের বাতাস,

জোছনার শরীরের স্বাদ যেন্‌!

ঘাইমৃগী সারারাত ডাকে;

কোথাও অনেক বনে – যেইখানে জোছনা আর নাই

পুরুষহিরণ সব শুনিতেছে শব্দ তার;

তাহারা পেতেছে টের

আসিতেছে তার দিকে।

আজ এই বিস্ময়ের রাতে

তাহাদের প্রেমের সময় আসিয়াছে;

তাহাদের হৃদয়ের বোন

বনের আড়াল থেকে তাহাদের ডাকিতেছে

জোছনায় –

পিপাসার সন্ত্বনায় – অঘ্রাণে – আস্বাদে!

কোথাও বাঘের পাড়া বনে আজ নাই আর যেন!

মৃগদের বুকে আজ কোনো স্পষ্ট ভয় নাই,

সন্দেহের আবছায়া নাই কিছু;

কেবন পিপাসা আছে,

রোমহর্ষ আছে।

 

মৃগীর মুখের রূপে হয়তো চিতারও বুকে জেগেছে বিস্ময়!

লালসা – আকাঙক্ষা – সাধ – প্রেম স্বপ্ন স্ফুট হয়ে উঠিতেছে সব দিকে

আজ এই বসন্তের রাতে;

এই খানে আমার নক্‌টার্ন –

 

একে একে হরিণেরা আসিতেছে গভীর বনের পথ ছেড়ে,

সকল জলের শব্দ পিছে ফেলে অন্য এক আশ্বাসের খোঁজে

দাঁতের – নখের কথা ভূলে গিয়ে তাদের বোনের কাছে অই

সুন্দরী গাছের নীচে – জোছনায়!

মানুষ যেমন করে ঘ্রাণ পেয়ে আসে তার নোনা মেয়েমানুষের কাছে

হরিণেরা আসিতেছে।

 

– তাদের পেতেছি আমি টের

অনেক পায়ের শব্দ শোনা যায়,

ঘাইমৃগী ডাকিতেছে জোছনায়।

ঘুমাতে পারি না আর;

শুয়ে শুয়ে থেকে

বন্দুকের শব্দ শুনি;

চাঁদের আলোয় ঘাইহরিণী আবার ডাকে;

এইখানে পড়ে থেকে একা একা

আমার হৃদয়ে এক অবসাদ জমে ওঠে

বন্দুকের শব্দ শুনে শুনে

হরিণীর ডাক শুনে শুনে।

 

কাল মৃগী আসিবে ফিরিয়া;

সকালে – আলোয় তারে দেখা যাবে –

পাশে তার মৃত সব প্রেমিকেরা পড়ে আছে।

মানুষেরা শিখায়ে দিয়েছে তারে এই সব।

 

আমার খাবার ডিশে হরিণের মাংসের ঘ্রাণ আমি পাব,

মাংস খাওয়া হল তবু শেষ?

কেন শেষ হবে?

কেন এই মৃগদের কথা ভেবে ব্যথা পেতে হবে

তাদের মতন নই আমিও কি?

কোনো এক বসন্তের রাতে

জীবনের কোনো এক বিস্ময়ের রাতে

আমারেও ডাকে নি কি কেউ এসে জোছনায় – দখিনা বাতাসে

অই ঘাইহরিণীর মতো?

 

আমার হৃদয় – এক পুরুষহরিণ –

পৃথিবীর সব হিংসা ভুলে গিয়ে

চিতার চোখের ভয় – চমকের কথা সব পিছে ফেলে রেখে

তোমারে কি চায় নাই ধরা দিতে?

আমার বুকের প্রেম ঐ মৃত মৃগদের মতো

যখন ধূলায় রক্তে মিশে গেছে

এই হরিণীর মতো তুমি বেঁচেছিল নাকি

জীবনের বিস্ময়ের রাতে

কোনো এক বসন্তের রাতে?

 

তুমিও কাহার কাছে শিখেছিলে!

মৃত পশুদের মতো আমাদের মাংস লয়ে আমারও পড়ে থাকি;

বিয়োগের – বিয়োগের – মরণের মুখে এসে পড়ে সব

ঐ মৃত মৃগদের মতো –

প্রেমের সাহস সাধ স্বপ্ন বেঁচে থেকে ব্যথা পাই, ঘৃণা মৃত্যু পাই;

পাই না কি?

দোনলার শব্দ শুনি।

ঘাইমৃগী ডেকে যায়,

আমার হৃদয়ে ঘুম আসে নাকো

একা একা শুয়ে থেকে;

বন্দুকের শব্দ তবু চুপে চুপে ভুলে যেতে হয়।

ক্যম্পের বিছানায় রাত তার অন্য এক কথা বলে;

যাহাদের দোনলার মুখে আজ হরিণেরা মরে যায়

হরিণের মাংস হাড় স্বাদ তৃপ্তি নিয়ে এল যাহাদের ডিশে

তাহারাও তোমার মতন –

ক্যাম্পের বিছানায় শুয়ে থেকে শুকাতেছে তাদের ও হৃদয়

কথা ভেবে – কথা ভেবে – ভেবে।

 

এই ব্যথা এই প্রেম সব দিকে রয়ে গেছে –

কোথাও ফড়িঙে – কীটে, মানুষের বুকের ভিতরে,

আমাদের সবের জীবনে।

বসন্তের জোছনায় অই মৃত মৃগদের মতো

আমরা সবাই।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কবিকল্পলতা অনলাইন প্রকাশনীতে কবিতা ও আবৃত্তি প্রকাশের জন্য আজ‌ই যুক্ত হন। (কবিকল্পলতায় প্রকাশিত আবৃত্তি ইউটিউব ভিউজ ও সাবস্ক্রাইবার বাড়াতে সহায়তা করে)