Prem Kobita Lyrics Subho Dasgupta : প্রেম – কবিতা – শুভ দাশগুপ্ত

+ প্রিয়জনের কাছে শেয়ার করুন +

 

৪ঠা অক্টোবর তাদের দুজনের প্রথম দেখা হল।
তখন বিকেল ঘনিয়ে আসছে। বাতাসে শীতের আমেজ।
১০ই অক্টোবর তাদের দীর্ঘক্ষণ কথা হল টেলিফোনে।
সেদিন ছেলেটি নতুন কেনা টব’এ গোলাপের চারা লাগাল।

৩০শে অক্টোবর রেস্টুরেন্টের নিরালা কেবিনে
ছেলেটি বলল-

তোমাকে আমি ভালবাসি।

মেয়েটি লজ্জায় মাথা নিচু করে টেবিলে আঁকিবুকি কাটল।

১২ই ডিসেম্বর গোলাপগাছে কুঁড়ি ধরল।
মেয়েটি রেস্টুরেন্টে ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করল-

-কেন ভালবাস আমায়? আমি সুন্দরী, তাই?

-তোমার চেয়েও সুন্দরী আছে কত…

-আমার বাবার প্রচুর অর্থ – তাই?

-তোমার বাবার চেয়ে বড়োলোক এখানে কম আছে?

-তাহলে?

-ভালবাসি ভালবাসি। তার আবার কারণ হয় নাকি?

মেয়েটি বাড়ি ফিরে বন্ধুদের টেলিফোনে অনেক আলোচনা
করল। সবাই একবাক্যে বুঝিয়ে দিল- ভালো যখন বাসে-তখন
একটা কিছু কারণ তো আছে বটেই। সেটা না বুঝে বেশি এগোস না।

৩রা জানুয়ারি মেয়েটি বললো :

-আমার কাছে কী চাও?

-কই, চাইনি তো কিছু।

-ভালোবাস অথচ চাওনা – তাহলে?

-না চাহিলে যারে পাওয়া যায়
তেওয়াগিলে আসে হাতে…

-এতো গান।

-শুধুই গান?

-তা ছাড়া কী?… কিছুই যদি না চাও, তবে ভালোবাস কেন?

-ভালোবাসি, তাই ভালোবাসা দিতে চাই। চাইব কেন?

-তুমি সত্যিই অদ্ভূত!

১০ই ফেব্রুয়ারি দুজনের দেখা হল মেট্রো স্টেশনের পাতালে।
ছেলেটি বললো :

-আমি কাল সারারাত বাঁশি বাজিয়েছি। সারারাত সেই সুরের
মায়াবী আলোয় তুমি নাচছিলে। অসামান্য অনন্য সে নাচ।

-ধ্যাৎ। কাল সারারাত আমি ঘুমিয়েছি।

-আমি কিন্তু তোমার নাচই দেখে গেছি সারারাত।

-তোমার বাঁশি একদিন শুনতে হবে

১২ই মার্চ ছেলেটি বাঁশি বাজালো। মেয়েটি শুনলো। সময় থমকে রইল অনেকক্ষণ।
বাঁশি যখন থামল, মেয়েটির দুচোখ ভরা
জলে। বললো-

-বাঁশি শুনতে শুনতে আমার ঘুম এল আবেশে। আমি দেখলাম
আমি নাচছি। মেঘের মাঝখানে, তারাদের পাশে আমি নাচছি। আকাশে ফুলের
গন্ধ।

-ডাক্তার আমায় বাঁশি বাজাতে নিষেধ করেছেন।

-সেকি? কেন?

-বাঁশি আমায় টেনে নিয়ে যায় স্বপ্নের মধ্যে। ডাক্তার বলেছে
স্বপ্ন দেখে আমার মস্তিষ্কের শিরা উপশিরায় জট
পাকিয়ে যাচ্ছে।

-তাহলে?

-ভাবছি।

১৬ই এপ্রিল মেয়েটি বললো :

-আমার বন্ধুরা বলেছে- তুমি খুউব ভালো। অসাধারণ, কিন্তু তুমি
সৃষ্টি ছাড়া। তোমার স্বপ্ন সব অর্থহীন।

-আমি জানি।
স্বপ্ন-টপ্ন ছেড়ে দিতে পারো না তুমি?

-না।

-তাহলে… তুমি তো আমাকে হারাবে।

-তোমায় পাইনি তো কখনও!

৫ই মে ছেলেটির মস্তিষ্কে অপারেশন হল। একটু সুস্থ হতে মেয়েটি
এসে বললো :

-ভাল আছ তো? এখন আর স্বপ্ন দেখছ না তো?

-দেখছি। আরও সুন্দর সব স্বপ্ন।

-তাহলে তো দেখছি operationটা আদৌ সফল হয়নি!

বাড়ি ফিরে বন্ধুদের ফোন করল মেয়েটি।
বন্ধুরা একবাক্যে বলল : বাঁশি বাজানো, স্বপ্ন দেখা, সবই backdated
সৃষ্টিছাড়া। তুই আর লোক পেলি না? তুই এত রূপসী।
তোর এত উজ্জ্বল prosppect। ভালো যদি চাস তাহলো শিগগির
বিয়ে করে ফেল তোর দাদার সেই বন্ধুকে-। উনিতো শুনলাম
কানাডাতেই settle করবেন।

৭ই জুলাই মেয়েটি আবার জিজ্ঞেস করলো : –

-তুমি সত্যিই কী চাও বলতো?

-তুমি আরও সার্থক, আরও সুন্দর হয়ে ওঠো।

-ব্যাস! আর কিছু না

-আর! চাই স্বপ্ন দেখতে।

-ও : স্বপ্ন তাহলে তুমি ছাড়তে পারবে না?

-না।

-তাহলে থাকো তুমি স্বপ্ন নিয়ে।

১২ই আগস্ট গোলাপ গাছে ফুল ফুটলো অনেক। সেদিন দুপুরে
ছেলেটির মস্তিষ্কে আবার অপারেশন হল।
১৩ই সেপ্টেম্বর ছেলেটি মারা গেল।
১৪ই সেপ্টেম্বর মেয়েটির শুভবিবাহ সুসম্পন্ন হল কানাডাগামী
সেই পাত্রের সঙ্গে।
২০শে সেপ্টেম্বর গোলাপ গাছটি হঠাৎ ঝড়ে উপড়ে গেল।
সেদিন সন্ধ্যার বিমানে মেয়েটি হানিমুনে গেল-।
যাবার আগে বন্ধুদের বলে গেল। স্বপ্নের চেয়ে বাস্তব অনেক ভাল।
অনেক মধুর। স্বপ্ন দেখে কেবল বোকারা।
৪ঠা অক্টোবর ছেলেটির মা ঝরে পড়া গোলাপ গাছটিকে
সযত্নে তুলে ফেলে দিলেন।

শূন্য টবে তখন কয়েকটা পোকা, কয়েকটা মাছি।
আমরা কেউ জানিনা
ওগুলো পোকা-মাছি-না কি
ছেলেটির স্বপ্ন।
আমরা ঠিক জানিনা।
আমরা কেউই জানিনা।

One comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কবিকল্পলতা অনলাইন প্রকাশনীতে কবিতা ও আবৃত্তি প্রকাশের জন্য আজ‌ই যুক্ত হন। (কবিকল্পলতায় প্রকাশিত আবৃত্তি ইউটিউব ভিউজ ও সাবস্ক্রাইবার বাড়াতে সহায়তা করে)