তোমাকে দেখার অসুখ (কবিতা) – সাদাত হোসাইন

প্রিয়জনের কাছে শেয়ার করুন :—

রাতের আকাশ জানে, একাকী সে তারা, আঁধারেই খসে পড়ে, খসুক,

নিঘুম রাত জানে, চোখের পাতায় জমে, তোমাকে দেখার অসুখ।

 

#

 

সে এসে বসুক পাশে যেভাবে

অসুখ আসে তারপর হয়ে যাক, যন্ত্রণা অনায়াসে।

তবুও আসুক সে। জানুক,

প্রিয়তম অসুখ সে!

 

#

 

যতদূর চোখ যায়, যতদূর যায়

না, সবখানে অদ্ভুত, তুমিময় আয়না!

 

#

 

যতটুকু দেখো, ততটুকু আছি ভালো,

কে দেখে বুকের ভেতর, কতটা অগোছালো!

 

#

 

তাড়িয়ে দিয়ো আমায়, নিশুতিরাতের তারা,

তাড়িয়ে দিও আকাশ, তাড়িয়ে দিও মেঘ,

আমারও খুব পা বাড়িয়ে, হারিয়ে যাবার তাড়া।

 

রাত্রি বলেই অন্ধকারে, আমার ভীষণ ভয়,

যদি ভুলে যাওয়া স্মৃতির সাথে হঠাৎ দেখা হয়,

 

মানুষ জানে, বাড়লে রাত্রি, মানুষ একা হয়!

 

#

 

মানুষ কি আর তেষ্টা বুকের চাতক হতে চায়?

তবুও তার একটা জীবন কাটে অপেক্ষায়!

 

#

 

ভুলে গেলে ভালো থাকা যায়, জানি,

তবু চাই, কিছু ব্যথা ফিরেই আসুক,

কেউ কেউ হয়ে থাক, দুরারোগ্য অসুখ!

 

#

 

চোখ মুছে দেখো ঘুচে গেছে সব নোনা জলে লেখা দাগ,

ভেঙে যাওয়া তুমি উঠে দাঁড়ালেই আঘাতেরা হতবাক!

 

#

 

শুধু যে ব্যথা দিতে জানো, জানো দিতে আঘাত আরও,

হঠাৎ বৃক্ষ যদি কুঠার হয়, কতটুকু তুমি নিতে পারো!

 

#

 

এই যে আমি এমন করে তাকিয়ে তোমায় দেখি,

চোখের ভাষায় চোখের কথা লিখি।

তার কতটা হৃদয় রঙা গাঢ়,

তার কতটা পড়তে তুমি পারো!

 

#

 

দুঃখের মতো গভীর করে পাই, হারাই হঠাৎ সুখের মতো দ্রুত,

জীবন জানে কার কতটুক পাওয়া, কার কতটুক কেবল পাওয়ার ছুঁতো!

 

#

 

যা কিছু আমার ছিল, লিখে দিই, তোমাকেই, জলের দামে,

তুমি ভাবো, জল বুঝি দামহীন।

আসলেতো জলের চেয়ে দামি কিছু নেই, অন্তবিহীন।

 

#

 

একদিন বলে দেবো, কোথাও যাবো না আর,

ছেড়ে যাক শেষ ট্রেনও, দূরের দেশে আবার।

তার চোখও কারো হোক, কাজলের রেখাটুক,

এইখানে থেকে যাক, ‘প্রিয় ভুল’ শেখাটুক।

 

#

 

কোথাও রাত নামে, বিষাদ খামে, কোথাও আলোর বান,

কোথাও ঠোঁট জানে, কী অভিমানে, ভালো থাকার ভান!

 

#

 

শত কোলাহল, ক্ষত-নোনাজল, মুছতে জানে না,

ভিড়ের মানুষ, একাকী ফানুস, খুঁজতে জানে না।

 

#

 

অগোচরে ছিঁড়ে যায় রোজ শত সুতো,

তবু থাকা অভ্যাসে, মায়াটাই ছুঁতো।

 

#

 

দূরে যেতে যেতে মুছে যায় মুখ, কাছে যেতে যেতেও অস্পষ্ট,

দূরত্ব জানে, সীমানা পেরোলেই, আড়মোড়া ভাঙে কষ্ট।

 

#

 

যেতে যেতেও ফিরে আসবার বাহানা কুড়াই,

স্মৃতি-গন্ধা, অচেনা সন্ধ্যা, তোমাতে উড়াই।

 

#

 

কার কাছে জমা রেখে মন, কার কাছে যাই?

মানুষও নদীর মতন, একটা জনম শুধু দুঃখ জমাই!

 

#

 

এই যে মানুষ শহর পোষে, তবুও মানুষ জানে,

শহর পোষে নির্জনতা, তোমার অভিমানে!

 

#

 

এই যে অবহেলা সয়ে রয়ে যাই,

এই যে দীর্ঘশ্বাসে ভাসে দুঃখ দিন,

জানো? দূরে চলে গেলে একবার,

কাছে আসা কী ভীষণ কঠিন!

 

#

 

কাছে গেলে মনে হয়, এত কাছে যেতে নেই,

কিছুটা দূরত্বই ভালো,

অথচ, কাছে যাবো যাবো করেই রাত্রি পোহালো!

 

#

 

আমি তার চোখের কাছে,

জমা রাখি যা কিছু আছে।

 

#

 

এই যে শহর ভিজলে মানুষ ভিজে যায়,

কই, আমার ভেজা ভেজায় নাতো তোকে!

তবে মিছেমিছি গল্প এবার থাকুক,

অশ্রু জানুক ভুল জমেছে চোখে!

 

#

 

এই বেলা, অবহেলা করে নাও,

ওই বেলা আমি যদি না থাকি?

যদি আমি ভুল করে তুমি হই,

দুঃখ দিতে, ভুল পথে পা রাখি!

 

#

 

ছুঁতে গেলে, কাছের আকাশ যায় দূরে সরে আরও,

আমি তাই নাম দিই আকাশ তোমারও!

 

#

 

হোক শোধবোধ, জমা মেঘ-রোদ, চলো ট্রেন লাইন- পথ খুঁজে নিই,

বুক তড়পায়, ভুল খরচায়, তবু নিজেদের, আজ বুঝে নিই!

 

#

 

মানুষ কত কিছু জমায়!

পুরনো ডাকটিকিট, অচেনা আধুলি, স্মৃতির রুমাল,

অথচ আমি জমাই উপেক্ষা।

একজীবনে তোমার জন্য যতটা অপেক্ষা আমি বুকে পুষে রাখি, তার সব ফিরে

আসে উপেক্ষা হয়ে।

আমি তাই উপেক্ষা জমাতে জমাতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠি।

 

#

 

‘মন কেমনে’র সূত্র সকল ছুঁড়ে,

ছুটছি যখন অনেক অনেক দূরে,

ঠিক তখুনি মেঘের মতো কিছু,

আলগোছে নেয় পিছু!

 

#

 

হঠাৎ কান্না পেয়ে গেলে, জল-চোখ আড়ালে শুকাই,

বুকে তবু জমে থাকো তুমি, তোমাকে কী করে যে লুকাই!

 

#

 

এখানে ছায়া থাকে, ওখানে মায়া থাকে,

আর থাকে ‘মন কেমনে’র লুকোচুরি,

কখনো কী কেউ,

চলে যেতে পারে পুরোপুরি?

 

#

 

যেতে যেতে কতদূর গেলে, ফেলে আসা পথ ভোলা যায়?

যে দুয়ারে জমে আছে দ্বিধা, কতো প্রেমে তাকে খোলা যায়!

যতদূর পাখি যায় উড়ে, ততদূর ফিরে আসা জানে,

ফিরবার পথটুকু তাই, মনে রেখো শত অভিমানে!

 

#

 

মুছে গেলে দাগ, ক্ষত নির্বাক, থেকে যায়,

কিছু মাঝরাত, স্মৃতির দুহাত, রেখে যায়।

 

#

 

এই যে হাঁটছি, হাঁটতে হাঁটতে পেরিয়ে যাচ্ছি আলোকবর্ষ পথ।

পেরিয়ে যাচ্ছি মাঠের পরে মাঠ, নদীর ওপার পাহাড়চূড়ার সারি।

ওইখানে এক ঘর থাকবে ভেবে, আর ক’ কদম হাঁটি।

পৌঁছে দেখি পথ থামেনা কোথাও, পথের অনেক বাকি।

 

#

 

সবটুকু কেড়ে নিতে ছেড়ে দেই, পেয়ে যাওয়া তোমার আধেক,

অথচ আকাশ ভেবে, একটা জীবন শুধু ছুঁয়ে গেছি মেঘ!

 

#

 

এমন বিষণ্ণ দিন শেষে

যদি খানিক আঁধার এসে,

ভীষণ আপন হয়ে বসে

তোমার আঙুলগুলোর ফাঁকে?

 

তখন আমার আঙুল ছাড়া

তুমি খুঁজবে কোথায় কাকে?

 

#

 

এই যে বুকের এত কাছে, ‘কে সে?’

এভাবেই মিশে থাকে, মানুষে মানুষে।

তারা ভালোবাসে, কাছে থাকে, নিদারুণ বিশ্বাসে!

হায়, তবে আড়ালে কে ফণাটি লুকায়?

কী করে সে বিশ্বাস, ডুবে থাকে, ‘বিষ-শ্বাসে!’

 

#

 

আমি তার, কবিতার ভাষা নই,

ভুলে যাওয়া দিন, ভালোবাসা নই।

 

#

 

ছেড়ে যাচ্ছে ট্রেন, ছেড়ে যাচ্ছে বাস,

শহরজুড়ে সন্ধ্যে নামার পুরনো অভ্যাস।

ছেড়ে যাচ্ছে শব্দ, ছেড়ে যাচ্ছে পাখি,

শহরজুড়ে এখন কেবল বৃষ্টি নামার বাকি।

এসে যাচ্ছে মেঘ, এসে যাচ্ছে নদী,

এখন হঠাৎ তোমায় ডাকি যদি?

যদি তোমার চোখের ভেতর তাকিয়ে বলি, সর্বনাশী,

আমি তোমায় ভালোবাসি!

 

#

 

নিভে যেতে যেতে যদি চমকাই,

চলে যেতে যেতে যদি থমকাই,

তবে জেনো,

রয়ে গেছে সবখানে তুমি এখনো।

 

#

 

যে জীবন ছুঁতে পারে তোমাকে এমন,

সে জীবন খোঁজে নাকো দুঃখ অকারণ!

 

#

 

হাত ছুঁয়ে দিই এসো বিশ্বাসটুকু, ভয় ভেঙে দিই এসো গুঞ্জনে,

চোখ বেঁধে দিই এসো নির্ভরতায়, ঠোঁট বেঁধে দিই চুম্বনে!

 

#

 

মনে রাখতে রাখতে ভুলেই গিয়েছি, ভুলেও যাওয়া যায়,

আজ ভুলে গিয়ে দেখি ফুলে ফুলে এ জীবন ছাওয়া যায়!

 

#

 

এই যে হাঁটতে গিয়ে ধুলোর সাথে দেখা, পা জড়িয়ে বলতে কী চায় সে?

আমরা শুধু পথের গল্প শুনি, ধুলোর গল্প আড়াল অনায়াসে।

 

এই যে নদীর গল্পে জল টলমল বুক, কাদার কথা কে বলেছে কবে!

জল কী জানে বুক ভেঙে যায় মাটির, জলোচ্ছ্বাসে ঢেউয়ের কলরবে!

 

এই যে বৃষ্টি এলে শহর ভাসে প্রেমে, তবু মেঘের মতো থমথমে বুক কারও,

বিষণ্ণ এক সন্ধেবেলা হঠাৎ, তুমি বৃষ্টি রেখে আমায় ছুঁতে পারো!

 

#

 

যতটুকু কাছে যাই, আসলে ততটুকু দূরে সরে আসি,

মানুষ মূলত আজন্ম নিঃসঙ্গতা চাষি।

 

#

 

তুমি কী মেঘ?

কী গাঢ়, গভীর, অথচ ছুঁতে গেলে নেই!

তুমি কী জল?

কী স্বচ্ছ, সহজ, অথচ প্রলয় নিমেষেই!

 

#

 

তুমি চলে গেলে জানে একজন কেউ,

শহরের বুক যেন নামে কারফিউ।

 

#

 

তোমার ছায়া ছাড়িয়ে,

ঢের দূরে চলে যাবো তাই,

দূরের জাহাজে ভেসেছি।

তারপর, অগুনতি তারার রাত্তির বুকে চেয়ে দেখি,

আমি তোমার কাছেই আমাকে রেখে এসেছি!

 

#

 

এই যে এমন ক্লান্তি মাখা দিন, এই যে এমন বিচ্ছিরি এক জীবন,

সবটা ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে যদি, আপন করি পাহাড় নদী, বন!

তবুও কী রাত দুপুরে হঠাৎ, তার কাছেই ফিরতে ইচ্ছে হবে?

বুকের ভেতর সাত সাগরের ঢেউ, উঠবে ফুঁসে তারই কলরবে!

ফিসফিসিয়ে গোপন কথার মতন, বলবে কী কেউ শূন্য নদীর ধারে,

এক পৃথিবীর সবটুকু থাকলেও, বুকের পাশে তবুও লাগে তারে!

 

#

 

এক হতে গিয়ে দুই হয়ে যাই, প্রেম ভেঙে গিয়ে দ্বৈরথ,

এক পথ ধরে হেঁটে যাবো ভেবে, দেখি দুজনার দুইপথ।

 

#

 

কখনো কখনো থাকি না কোথাও, নিজেকে নিয়ে নিরুদ্দেশ,

মন খারাপের কান্না লুকাই, ইচ্ছেগুলোর বিরুদ্ধে!

 

#

 

চলে যেতে যেতে আরেকবার তোমাকে দেখে নিলাম, কী অদ্ভুত, ওই চোখে একদিন শুধু আমিই ছিলাম!

 

#

 

যাচ্ছো যাবে, চোখের আড়াল, দেয়াল তুলে উধাও হও, থাকার কথা, থাকছি আমি, জানছি তুমি আমি নও।

 

#

 

আকাশের মতো মাঠের শরীরজুড়ে,

মানুষ বানায় কাছে থাকবার ঘর।

ঘরের জন্য দেয়াল যে দরকার,

দেয়াল বানায় মানুষে-মানুষ পর।

 

#

 

দেখা নেই–

তার মানে নয়,

স্মৃতি লেখা নেই!

 

শোনা নেই–

তার মানে নয়,

দিন গোনা নেই!

 

#

 

কথা নেই–

তার মানে নয়,

ব্যাকুলতা নেই!

 

#

 

এই যে আমার দূরে থাকতে ভাল্লাগে না,

তবুও থাকি তেরো নদীর ওপার,

লুকিয়ে বুকে সাত সমুদ্র ঠিকই

বয়ে আনে সুবাসটুকু তোমার!

 

#

 

একটা মানুষ একলা রাতের বৃষ্টিভেজা একলা কাক,

কেউ দেখে না জানলা খুলে, তার কতটা মন খারাপ!

 

#

 

বৃষ্টি এলো–

বারান্দাতে পাথরকুচির পাতা,

কাঁপছে যেন জলের ফোঁটায়,

শেষ চিঠিটাও কান্না লেখার খাতা।

কেউ কি লেখে আর?

শব্দজুড়ে হাওয়ার মতন, জমায় হাহাকার?

ওপারে তার, আলোর শহর, হৃদয় অন্ধকার।

 

#

 

একদিন তার নাম ভুলে যাবো, চুলে ভাসা চেনা গন্ধও,

প্ল্যাটফর্ম জানে সময়ের ট্রেন, সময় ফুরালে অন্ধও।

 

#

 

যে আমারে মনে রাখে নাই, তারে রাখি মনে,

কেউ কেউ প্রতিশোধ নেয়, এভাবে গোপনে!

 

#

 

যেদিন ভিজে গেলো কাশবন, জ্যোত্সা ও রূপালী আলো

নাওয়ের গলুই ছুঁয়ে কুয়াশার ঢল,

মাঝরাতে টেনে নেয় মাঝ দরিয়ায়।

সেদিনও ছিপছিপে ঘাসের ডগায়

জমে থাকে কয় ফোঁটা কান্নার জল।

আবছায়া চাদরের নিশাচর ওম

তবুও খুঁজে ফেরে তোমাতে আমায়।

 

#

 

তুমি ভোরের রোদের মতো মেয়ে, তুমি খানিক জলের মতোও,

তোমায় ভেবে জীবন জাগে যদি, তোমার জন্য জাগে ক্ষতও।

তুমি বুকের খুব গভীরে থাকা, একটা মানুষ, তবুও কাকে খোঁজো?

তুমিবিহীন শূন্য শহর-মন, এই অনুভব কতটুকু বোঝো?

 

#

 

আমি হাত বাড়িয়েই আছি,

তুমি না হয় ছুঁয়ে দিলে মিথ্যে অজুহাতে।

 

#

 

সব পুড়েছে, আর কিছু নেই, জল ব্যতীত,

পোড়া শরীর, তবুও জানে, চোখ ব্যথিত!

 

#

 

থেমে যাওয়ার আগে কি আর কেউ জানতো?

এই মানুষটাও ভীষণ ক্লান্ত!

 

#

 

একা আয়নায়, ভুল বায়নায়, মুখ দেখা যায়, দুঃখী দ্রষ্টার

তবু দিনমান, ভুলে অভিমান, হয় দেয়ালের, সুখী পোস্টার!

 

#

 

রোদের ভেতর ছায়া, নাকি ছায়ার ভেতর রোদ,

এক জীবনের সকল হিসেব, এমনই অদ্ভুত!

 

#

 

মৃত্যু আসে রোজ–

আর এইখানে দেয়ালে দেয়ালে রেখে যায় প্রেম, ঘৃণা, ভালোবাসা, অভিশাপ।

তারপর একদিন, গোরস্তান হয়ে যাবে ফেসবুক, আইডিগুলো এপিটাফ!

 

#

 

এই বিষণ্ণ হেমন্তের সন্ধ্যায়,

যদি ওম জমায় তোমার আঁচল, বুক,

তবে দিকে দিকে হেমন্ত নেমে আসুক।

 

#

 

কোথাও ভূমিকম্প নেই, অথচ থরথর শহর কাঁপছে!

তুমি কী জানেনা, এ শহরের তোমার স্পর্শের চেয়ে বড় কোনো ভূকম্পন নেই!

 

#

 

এই যে আমায় ফেলে যাচ্ছো একা,

একা কী নও তুমিও দূরের পথে?

শেষ বেলাতে হঠাৎ কান্না পেলে,

তাকিয়ে দেখো, কাঁদছে কে শপথে!

 

#

 

একদিন ডুবে গেলে চাঁদ,

ডাহুকের ডাক যাবে থেমে,

কোথাও একা কেউ জাগে,

অদ্ভুত, বেহিসেবি প্রেমে!

 

#

 

তোমার ছায়া ছাড়িয়ে,

ঢের দূরে চলে যাবো তাই,

দূরের জাহাজে ভেসেছি।

তারপর, অগুনতি তারার রাত্তির বুকে চেয়ে দেখি,

আমি তোমার কাছেই আমাকে রেখে এসেছি!

 

#

 

তুমি কী ছায়ার মতো? আছো, তবু ছুঁতে গেলে নেই!

তুমি কী মায়ার মতো? ভাসো, তবু ডুবি তোমাতেই!

 

#

 

একদিন তুমি হলে নদী,

আমি ঠিক ভাসাবোই নাও,

তারপর ঝড় হও যদি,

তবু বুকে সমাধি বানাও।

 

#

 

একদিন নদী এলে কাছে,

আর এলে জল ছলছল,

নীল শাড়ি আঁচলে তোমার,

মেখে দেবো জোছনা অতল!

 

#

 

একদিন মেঘ এলে কিছু, কিছু এলে পুবালি বাতাস, লিখে দেবো নীল খাম চিঠি, আর দেবো বুকের বাঁ পাশ

 

#

 

সব সুদীর্ঘ দীর্ঘশ্বাস শুষে নেয় শহুরে বাতাস,

তবু কিছু হাহাকার পুষে রাখে বুকের বাঁ পাশ।

 

#

 

যা কিছু লিখে গেছি, তারও চেয়ে ঢের বেশি, না লেখাই রয়ে যায়,

যা জীবনে বলে গেছি, তারও বেশি নির্বাক, কত কথা সয়ে যায়!

 

শব্দের সাধ্য কী অনুভূতি হয়ে যায়!

 

#

 

‘মন কেমনে’র ক্ষণ বাড়ছে আরও,

এমন কী হয় তারও?

 

#

 

দীর্ঘশ্বাসে ভেসে, বিদায়ের চিঠি আসে, যাত্রীর নামে,

শহুরে সন্ধ্যায় কারো বুকে অ-শহুরে রাত্তির নামে।

 

#

 

এক পা দু পা করে যত ধীরে কাছে আসা যায়,

দূরে যাওয়া যায় তারো বেশি দ্রুত,

অভিমান তাই আড়ালেই বাড়ে, আসলে বেড়ে চলে

দূরত্ব বাড়ানোর ছুতো!

 

#

 

আমি একটা পাতার কথা জানি,

পাতাটার বুকে শতেকখানি ক্ষত,

তবুও সে সবুজ হয়েই ছিল,

হাওয়ায় কাঁপা আর পাতাদের মতো।

হঠাৎ যেদিন হলুদ হয়ে গেল,

সেদিন কেবল দেখল সবাই তাকে,

হাসতে জানা মানুষ যেমন জানে

কী ক্ষতদের লুকিয়ে বুকে রাখে!

 

#

 

তারপর মুছে যাবে সব, মুছে যাবো তুমি-আমি,

হয়ে যাবো অন্য মানুষ, অন্যকোনো মন,

শূন্য হতেই শুরু, আমাদের সব আয়োজন!

 

#

 

বুকে আলপিন, বেঁধে রাত দিন, তবু জোছনায় হয় স্নান,

আলো জ্বলে যায়, নাকি বলে যায়, তার বুক দুঃখে ম্লান!

 

#

 

শহুরে মানুষ আমি বুকে পুষি ‘অ-শহুরে’ মন,

যদি অসহ্য বিষাদ বিকেল শেষেও–

তোমাকেই নিয়ে আসে কোনো ডাকপিওন!

 

#

 

ঝরা পালকের মতো, ঝরে যদি যাই?

হলুদ পাতার মতো, মরে যদি যাই?

যদি শূন্য এ রাতের মতো হয়ে যাই চুপ?

যদি তোমাকে না ডাকি আর?

তুমি কি তখন এই আমার মতো,

খুঁজে পাবে কাউকে আবার?

 

#

 

পালকের দুঃখ রেখে পাখি যায় উড়ে,

মানুষও পাখির মতো, ছুটেছে সুদূরে।

পাখি জানে পালকেরও বুকে ব্যাকুলতা,

জানে কি পথিক তার, পথে জমে ব্যথা?

 

ফেলে আসা পথ আর ফেলে আসা মন,

কার কাছে কতটুকু, করেছে গোপন?

যতটুকু দুঃখ ভার, মেঘের আকাশ,

তারও বেশি দুঃখ রাখে, বুকের বাঁ পাশ।

 

জানে কি মানুষ তার,

ফেলে আসা পথটার,

বুকজুড়ে ক্ষত আঁকা পায়েরই ছাপে,

মানুষই হৃদয় দিয়ে মানুষ মাপে!

 

#

 

পথ জানতো, সে ক্লান্ত, তবু জাগছে, একা যাত্রী,

জল টুপটাপ, চোখ চুপচাপ, জানে কাঁদছে, একা রাত্রি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


কবিকল্পলতা অনলাইন প্রকাশনীতে কবিতার আড্ডায় আপনার স্বরচিত কবিতা ও আবৃত্তি প্রকাশের জন্য আজ‌ই যুক্ত হন।