Pakhi hoye jay pran Abul Hasan : পাখি হয়ে যায় প্রাণ – আবুল হাসান

+ প্রিয়জনের কাছে শেয়ার করুন +
অবশেষে জেনেছি মানুষ একা!
জেনেছি মানুষ তার চিবুকের কাছেও ভীষণ অচেনা ও একা!
দৃশ্যের বিপরীত সে পারে না একাত্ম হতে এই পৃথিবীর সাথে কোনোদিন।
ফাতিমা ফুফুর প্রভাতকালীন কোরানের
মর্মায়িত গানের স্মরণে তাই কেন যেন আমি
চলে যাই আজও সেই বর্নির বাওড়ের বৈকালিক ভ্রমণের পথে,
যেখানে নদীর ভরা কান্না শোনা যেত মাঝে মাঝে
জনপদবালাদের স্ফুরিত সিনানের অন্তর্লীন শব্দে মেদুর!
মনে পড়ে সরজু দিদির কপালের লক্ষ্মী চাঁদ তারা
নরম যুঁইয়ের গন্ধ মেলার মতো চোখের মাথুর ভাষা আর
হরিকীর্তনের নদীভূত বোল!
বড় ভাই আসতেন মাঝরাতে মহকুমা শহরের যাত্রাগান শুনে,
সাইকেল বেজে উঠত ফেলে আসা শব্দে যখন,
নিদ্রার নেশায় উবু হয়ে শুনতাম, যেন শব্দে কান পেতে রেখে :
কেউ বলে যাচ্ছে যেন,
বাবলু তোমার নীল চোখের ভিতর এক সামুদ্রিক ঝড় কেন?
পিঠে অই সারসের মতো কী বেঁধে রেখেছ?
আসতেন পাখি শিকারের সূক্ষ্ম চোখ নিয়ে দুলাভাই!
ছোটবোন ঘরে বসে কেন যেন তখন কেমন
পানের পাতার মতো নমনীয় হতো ক্রমে ক্রমে!
আর অন্ধ লোকটাও সন্ধ্যায়, পাখিহীন দৃশ্য চোখে ভরে!
দিঘিতে ভাসত ঘনমেঘ, জল নিতে এসে
মেঘ হয়ে যেত লীলা বৌদি সেই গোধূলিবেলায়,
পাতা ঝরবার মতো শব্দ হতো জলে, ভাবতুম
এমন দিনে কি ওরে বলা যায়—?
স্মরণপ্রদেশ থেকে এক একটি নিবাস উঠে গেছে
সরজু দিদিরা ঐ বাংলায়, বড়ভাই নিরুদ্দিষ্ট,
সাইকেলের ঘণ্টাধ্বনি সাথে করে নিয়ে গেছে গাঁয়ের হালট!
একে একে নদীর ধারার মতো তারা বহুদূরে গত!
বদলপ্রয়াসী এই জীবনের জোয়ারে কেবল অন্তঃশীল একটি দ্বীপের মতো
সবার গোচরহীন আছি আজও সুদূরসন্ধানী!
দূরে বসে প্রবাহের অন্তর্গত আমি, তাই নিজেরই অচেনা নিজে
কেবল দিব্যতাদুষ্ট শোনিতের ভারা ভারা স্বপ্ন বোঝাই মাঠে দেখি,
সেখানেও বসে আছে বৃক্ষের মতন একা একজন লোক,
যাকে ঘিরে বিশজন দেবদূত গাইছে কেবলি
শতজীবনের শত কুহেলি ও কুয়াশার গান!
পাখি হয়ে যায় এ প্রাণ ঐ কুহেলি মাঠের প্রান্তরে হে দেবদূত!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কবিকল্পলতা অনলাইন প্রকাশনীতে কবিতা ও আবৃত্তি প্রকাশের জন্য আজ‌ই যুক্ত হন। (কবিকল্পলতায় প্রকাশিত আবৃত্তি ইউটিউব ভিউজ ও সাবস্ক্রাইবার বাড়াতে সহায়তা করে)